Saturday, August 6, 2022

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক

 কয়েকদিন আগে একটি সংবাদমাধ্যম নিউজ করেছে, দেশে পেট্রোল আছে ১১ দিনের আর অকটেন আছে ১৩ দিনের। পরে জানলাম, সাব-এডিটর ভুলবশত এই উপাত্ত দিয়েছে। তারপর এটাও জানলাম, আমাদের পেট্রোল-অকটেন আমদানি করতে হয় না। 


গ্যাস উত্তোলনের সময় বায়ো-প্রোডাক্ট হিসেবে পেট্রোল রিফাইন করে পেট্রোল-অকটেন পাওয়া যায়। আমরা এসব জ্বালানি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি আমরা চাহিদার অতিরিক্ত অংশ বিক্রিও করতে পারব। 


আর ডিজেলের বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ২/৩ দিন আগেও বলেছেন, আমাদের আরও ৪০ দিনের তেল মজুত আছে। চিন্তার কিছু নেই।

যদি এসব জানা ইনফরমেশন গুলো প্রতারণা না করে তাহলে রাত ১০ টার পর প্রজ্ঞাপন দিয়ে ২ ঘন্টার ব্যবধানে জ্বালানির দাম বাড়াতে হলো কেন? আর পূর্ব ঘোষণা ছাড়া তেলের দাম ৪২ শতাংশ বাড়ানো নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক। 

জনগণের জীবনযাত্রার উপর চাপ কমাতে অবিলম্বে জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাই।


বি.দ্রঃ বিশ্ববাজারে কয়েকদিন ধরে তেলের দাম নিম্নমুখী।

Sunday, February 20, 2022

বাংলা ভাষায় হালের বৃুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা


'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' গানটির কথা ও সুর যেকোন বাঙালির কর্ণকুহরে প্রবেশ মাত্রই তার স্মৃতিতে স্পষ্টতর ভেসে উঠে বিষাদময় অথচ প্রবল অনুপ্রেরণার সেই দিনের কথা। একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলা দিনপঞ্জিতে ৮ ফাল্গুন। ১৯৫২ সালের এই দিনে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের গুলিতে বাঙালি অকুতোভয় বীরদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। শিমুল-পলাশ-কৃষ্ণচূড়া হয়ত বায়ান্নর আগেই বাঙালির এই বীরত্ব গাঁথা আপন দিনলিপিতে লাল অক্ষরে লিখে রেখেছিল। তাইতো প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে কালো পথে রক্তিম ফুল ফোটে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে।

এই ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আমাদের সবারই কম বেশি জানা আছে।তবুও নিজ সুবিধার্থে দুই একটা কথা বললে বোধহয় অতিকথন হবে না। এই দিনটি বাঙালি জাতির মায়ের ভাষাকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে তুলে ধরার দৃঢ় প্রত্যয়ের দিন। এই দিনে বুকে দুর্দমনীয় সাহস নিয়ে শত্রুর গুলির সামনে দাড়িয়েছিল বাঙালি মায়ের বীর সন্তানেরা। মুহুর্তেই রাজপথ হয়েছিল রক্তে রঞ্জিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে কোনো জাতিকে প্রাণ দিতে হলো। সেদিনেই বাংলার দামাল ছেলেরা নির্যাতিত বাঙালি জাতির স্বাধীনতার বীজ রোপন করেছিল। ৭১ এ দেশকে করেছিল শত্রুমুক্ত। 

১৯৪৮ সালে তৎকালিন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হলে যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, "উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা" তখনই উপস্থিত ছাত্ররা সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে "না, না" বলে প্রতিবাদ করেছিল। ছাত্রদের সেই বীরত্ব গাঁথা বাঙালিদের জন্য গৌরবের।

কিন্তু হাল আমলের ছাত্র-শিক্ষক কিংবা বুদ্ধিজীবিদের ৪৮ সালের সেইদিনের মত বাংলা ভাষাকে সমুন্নত করার পথে সকল বাধা বিপত্তিকে "না" বলে প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রবাদ আছে, ‘স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’ বর্তমান সময়ের অবস্থ‍া যেন তারই প্রতিফলন। একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে দেশের বুদ্ধিজীবি মহল নড়েচড়ে বসেন, চোখে মুখে দায়িত্বের রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠে। ভাষার উন্নয়ন কিভাবে করা যায় গভীর অনুসন্ধান করে তার উপায় বের করেন।রাষ্ট্রীয় নানা কাজে বাংলা ভাষাকে কেন যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় না। ভাষার মর্যাদাহানিকর নানান বিষয়াবলি খুঁটে খুঁটে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। প্রতিবছর এইদিনে পত্রিকার পাতা ভরে ভরে ভাষার তোয়াজ করা হয়। জায়গা সংকুলানের কারণে হয়ত অনেকেই ভাষার পক্ষে অসাধারণ বক্তব্য জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেন না। 

কিন্তু একুশ চলে গেলে সকলেই কেমন জানি দায়সারা হয়ে পড়েন। কত আইন, কত নীতির বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অতল সাগরে হারিয়ে যায়। তখন গল্পটা হয়ে যায় অনেকটা রাজার দীঘি খননের গল্পের মত। গল্পটা অনেকটা এরকম- রাজ্যের রাজা তার সুনাম বাড়ানোর জন্য রাজ্যে দুধের দীঘি খনন করতে প্রজাদের আদেশ করলেন। রাজার আদেশ অমান্য করার জো নাই। অতএব পুকুর খনন করা হলো। সকল প্রজাকে বলা হলো, তারা যেন প্রত্যেকেই ধবল দুধের একটি কলস দীঘিতে এনে বিসর্জন দেন। দান খয়রাতের বিষয় সামনে আসলে বাঙালির মেধায় নানা কৌশল গিজগিজ করে। মেধার ইন্ধনে এক প্রজা ভাবল, সকলেই তো খাঁটি ধবল দুধের কলসী দান করবে, আমি একজন যদি পানির কলসী ঢেলে দেই তাহলে তা সহস্র সহস্র দুধের কলসীর সঙ্গে অনায়াসেই থাকতে পারবে। রাজ্যের সকল প্রজাই ছিল সমান বুদ্ধিমান, সকলেই প্রথম প্রজার মত চিন্তা করল। একুশ চলে যাওয়ার পরের গল্পটাও এরকম। সকলেই ভাবে এই ক্ষুদ্র দায়িত্ব আমি না নিলেও চলবে। কেউ না কেউ নিশ্চয়ই ভাষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসবেন। ফলে গল্পের মত কেউ বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির জন্য সিকি পরিমাণ দায়িত্ব নিতে পারে না কিংবা এই প্রয়াসকে অরণ্যে রোদন বলেও মনে করেন। 


বাংলা ভাষায় জ্ঞান চর্চার কথা উঠলে তারা নির্দিধায় বলেন, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানশাস্ত্র রচনা করা যায় না, অর্থনীতি,দর্শন, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান জোতিবিজ্ঞানের প্রাথমিক ভাবটুকুও সহজে প্রকাশ করা যায় না। এই কথা নিরেট সত্য বটে। কিন্তু প্রশ্ন করা যায়, ভাষার এই সংকীর্ণতার পেছনে দোষটা আসলে কার? বাংলা ভাষার দোষ নাকি শাস্ত্রের দোষ? উত্তর আসলে কোনটিই না। দোষটা স্বয়ং বাঙালি জাতির। ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা। ভাবই যদি না থাকে তাহলে ভাষার সমৃদ্ধি গাছে কাঁঠাল গোফে তেলের মত হয়ে যায়।প্রথমেই ভাবের অন্বেষণ করতে হবে। ভাব থেকে ধ্বনি সৃষ্টি হবে। আকাশ থেকে তো আর বৃষ্টির ধারার মত ধ্বনির বর্ষণ হয় না। সুতরাং আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে কিংবা অন্যের ভাষার দিকে লোভাতুর হয়ে আড় চোখে তাকালে নিজের ভাষাকে সমৃদ্ধ করা যাবে না। বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি সাধন করতে হলে বিদ্যমান মনস্তত্বাত্তিক ভাবনা প্রক্ষালন করে নব বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগাতে হবে। পুরাতন গ্রীক, ল্যাটিন, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষাসহ যেসব ভাষাকে সমৃদ্ধশালী মনে করা হয় সেসব ভাষা আসলে তাদের নিজস্ব চেষ্টায় সমৃদ্ধ হয়েছে। যে জাতির বস্তুগত অভিজ্ঞতা যত বেশি সে জাতির ভাষা তত সমৃদ্ধ ও বেগমান, তাদের শব্দভান্ডার তত বিস্তৃত। কিন্তু সেই ভাবনা বাঙালির মানসপটে থাকলেও সুনিশ্চিত কসরত করার সদিচ্ছার অভাবে অঙ্কুরেই তা বিনষ্ট হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে, একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষার বইসমূহের একচেটিয়া রাজত্বে বাংলা ভাষার বইসমূহ কতটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। শিক্ষক মহোদয়গণ সর্বদা শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার বইয়ের শরণাপন্ন হওয়ার উপদেশ দেন। বাংলা ভাষার পান্ডুলিপিকে তারা এক রকম ঘৃণা করেন। বাধ্যগত শিক্ষার্থীরা তখন নিরুপায় হয়ে ইংরেজি বইয়ের ধর্ণা ধরেন, ভাসা ভাসা কোন রকম ধারণা নিয়ে কিংবা সেটাও সম্ভব না হলে মুখস্থ করে পরীক্ষা কক্ষে বমি করতে করতে ৪/৫ বছর পার করেন। এই সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষার্থী বোধহয় দেখেনি, জনৈক শিক্ষক একটি বিদেশি ভাষার বইয়ের বাংলায় ভাবানুবাদের সৎ প্রয়াস চালিয়েছেন। চালালেও তা কতটুকু সফল কিংবা ব্যর্থ হবে তা বলতে না পারলেও নির্দিধায় বলতে পারি ক্ষুদ্র প্রয়াসও তারা চালাননি। 

তারা বিট্রিশদের সাম্রাজ্যবাদী সেই নীতির "আমরা এমন একদল মানুষ তৈরি করবো যারা রক্তে মাংসে হবেন এদেশীয় কিন্তু রুচি, শিক্ষাদীক্ষায় তারা হবেন বিট্রিশ মনোভাবাপন্ন" ধারায় আটকে আছেন। তারা শিক্ষার্থীদের ভ‍ৎর্সনা করে বলেন, বাংলা ভাষায় দামি দামি তত্ত্বের ভাব সহজে প্রকাশ করা যায় না। 

ফলে বাংলা ভাষায় লিখিত স্বল্প সংখ্যক বই গণযোগাযোগ বিদ্যার নীরবতা কুণ্ডলী তত্ত্ব অনুসারে গ্রন্থাগারের পশ্চাদদেশে ধুলোবালির চাদরে ঢাকা পড়ে নিস্তব্ধ হয়ে করুণ জীবন যাপন করেন।

Wednesday, February 16, 2022

নৌ-ভ্রমণ এত রোমাঞ্চকর কেন?


অর্ধবছর নাগাদ নাড়ীর স্পন্দন অবদমিত রেখে শেষ অবধি ব্যর্থ হলাম। এই ব্যর্থতা কারো জন্য হয়ত হাসির খোরাক হবে কেউ হয়ত ব্যাপারখানা জেনে আমাকে নিতান্ত গর্দভ মনে করবে। সে যাই হোক, আমার গতিতে এসব ভাবনার কোন প্রভাব পড়ে না। 

ব্যাগে প্রয়োজনীয় কি নিলাম, কি নিলাম না কিছুই জানি না। তবে হুড়মুড় করে বেরিয়েছি এটুকু সচেতন মস্তিষ্কেই বলতে পারি। লক্ষ্য নৌ-পথে চাঁদপুর আপন ঠিকানা।

লঞ্চের ঘাটে পা রাখতেই কানে ভেসে এলো  মিশ্র-দৃঢ় কণ্ঠ। ছাড়ে,,,,,ছাড়ে। আগে,,,,,আগে। সাথে হকারদের হৈ-হুল্লোড় ঘাটের বাতাসকে আরো ভারী করে তুলেছে। তারা অধিকাংশই ফল আর রুটি বিক্রেতা। দেখে মনে হয় একেবারে সস্তায় বিক্রি করছে।

নৌযানে বাস কিংবা ট্রেনের মত প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য জানালার পাশের সীট বরাদ্দের জন্য তদবির প্রয়োজন হয় না। আমারও হলো না। কারণ নৌযানের পুরো জায়গাই আমার।

ঘড়ির কাটা দুটি তখন ১৫০ ডিগ্রি কোণ তৈরী করছে। মানে বিকাল ৫ টা। বিকট শব্দে হর্ণ আর কয়েকশ সিলিন্ডার বিষাক্ত গ্যাস আকাশে ছেড়ে লঞ্চ ঘাট ছাড়ল। মনটা খারাপ হলো।নড়েচড়ে বসলাম। 

বুড়িগঙ্গা নদী। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মেগাসিটির অত্যাচারে তার পানি এখন জলজ প্রানীর মৃত্যুর কৃষ্ণ পাঁচন। নদীর দুই পাশে তালতমাল সারি সারি নানা রঙের,নানান ডকের জাহাজ,কিস্তি।  দুই পাড়ের হাড়ভাঙ্গা শ্রম আর স্বল্প মজুরীর  শ্রমিকের সৃজনশীল নানা ক্রিয়া, ব্যস্ততার শৃঙ্খল  দেখতে দেখতে অনেকটুকু পথ সামনে এসেছি। এখন আর রাজধানীর চিত্র মাথায় নেই।  ফুটপাতে প্রবাহমান জনস্রোতের প্রতিকূলে কখনো বা অনুকূলে ক্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পা ফেলার ফুরসত নেই কিংবা ফুট ওভারব্রিজের ৪ ইঞ্চি প্রশস্ত সিঁড়িতে পিপীলিকার গতিতে এগুনোর সময় স্বীয় পকেটে হাত রেখে পকেটমারকে হতাশ করার জরুরত নেই। একাকিত্ব সবসময় মানুষকে একাকী করে দেয়না। কখনো হয়ত এই একাকিত্বই হয়ে উঠে পছন্দের মানুষকে মনস কল্পনায় শৈল্পিক রূপে সাজানোর সুন্দরতম অবকাশ। সেই অবকাশ আমি পেয়েছি কিনা জানি না। শুধু বলতে পারি ব্যস্ত জীবনের স্মৃতি বিনাশ করেছি। নদীর কোন এক ঘাটে, না ঘাট বলা ঠিক হবে না, নদীসৈকত বলা যেতে পারে, একদল তরুণী অবলীলায় একান্ত আনমনে স্নান করছে। কেউ আবার কারুকার্য খচিত কলসী কাঁখে কোমরে শাড়ি পেছিয়ে আঁচল বুকে ফেলে লোমহর্ষক ভঙ্গিতে পা ফেলছে অবিরত। যারা স্লান করছে সেসব তন্বী যুবতীরা নিতান্ত শিশু মননে লীলাময় দেহে জলের গামলা উপুড় করে দিচ্ছে। মুহুর্তেই পাতলা শাড়ির আবরণে লুকানো পীনস্তন চিরসত্য সৌন্দর্য জগৎ সংসারে প্রকটিত করতে বাধ্য হল। কৃষ্ণ জল এই সৌন্দর্য ছুয়ে আর কৃষ্ণ রইল না।বৃষ্টির পানির ন্যায় স্বচ্ছ শুভ্র হয়ে বহমান জলে মিশে দুর্ভাগা জলবিন্দু গুলোর সঙ্গে বিতর্ক জয়ী হয়ে মেঘনা অভিমুখে খুশিমনে চলছে।  গুরুভার নিতম্ববিশিষ্টা স্বাস্থ্যবতী স্নানরত রমণীগণ নির্দিধায় তাঁদের কর্ম সাধনে ব্যস্ত। অথচ তাদের এই কমলার মত ঠোঁট, স্নিগ্ধ চাদনী রাতে পুকুরের জলের ন্যায় কোমরের মৃদু ঢেউ, বক্ষদেশের কম্পন পুরুষ মনকে কতটা আড়োলিত করতে পারে সেই ভাবনা তাদের মনে নেই।

যাই হোক, জলের বর্ণ এখন আর কৃশকায় নয়।মেঘনায় চলে এসেছি। বক,গাঙছিল আর মৎস্য শাবকের খেলা। চিপস উড়ালে সেই খেলার ষোলকলা পূর্ণ করা যায়। এক প্যাকেট চিপস থাকলে বোধহয় তাদেরকে ঘরে নিয়ে আসা যাবে। পানিতে ভেসে যাচ্ছে জাহাজের হিংস্র দাঁতে চর্বিত কচুরিপানা। দেখলে বেশ মায়া হয়। যদি তাঁরা এমন হিংস্রতার স্বীকার না হত,তাহলে এই সংসারে কত সৌন্দর্যই না বিলাইত!!

চারপাশের নানান বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে কখন যে পথ ফুরিয়ে গেল টের পেলাম না। পাশ থেকে কয়েকটি কণ্ঠ ভেসে এলো। 'ভাই, চলে এসেছেন, নামবেন না?' মাথা নাড়িয়ে নিমে এলাম। দেখলাম,, নৌকায় করে জেলেরা স্বল্পমূল্যে ইলিশ বিক্রি করছে।মানিব্যাগের অবস্থা বেশি ভালো না।চাহিদামত খরিদ করতে পারলাম না। স্বভাবতই ঘাট থেকে বের হয়ে নৌ-ভ্রমনের রোমাঞ্চকর বুলীর শেষ পৃষ্ঠায় মজবুত দাড়ি ফেললাম।

Wednesday, February 9, 2022

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে কীভাবে?


বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদোন্নতি পেয়েছে। কারো যদি শস্য পরিমাণ দেশপ্রীতি থাকে তার কাছে নিশ্চয়ই এ খবরটি আনন্দের। তার অর্থ হচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।  এমন সুসময়ে দেশের মানুষ খুশির ঢেকুর তুলবে এটাই স্বাভাবিক। 
খুশির সংবাদ হলো , গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থ বছরে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। গণমাধ্যম বেশ ভালোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ খরবটির কভারেজ দিয়েছে। দেশে গেছে, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। গত অর্থবছর (২০২০-২১) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নয় মাসের সাময়িক হিসাবে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার দেখানো হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে চূড়ান্ত হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাবে আয় বেড়েছে ৩৭ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ হলো ৩ হাজার ১৬৩ টাকা। 

এখানে তো কেবল আয় দেখানো হলো। ব্যয়ের হিসাব দেখানোর প্রয়োজন আছে বৈকি? উত্তরটা ‘না’ মনে হচ্ছে । কারণ বিবিএস আয়ের হিসাব দেখিয়েই ভীষণ খুশি। সরকারের নীতি এটিই।

আমরা যদি আয়ের হিসাবটা দেখি তাহলে দেখা যাবে তিন মাসের মধ্যে আমাদের আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে ব্যয় কতটুকু বেড়েছে তার হিসাব পকেটের মানিব্যাগের দিকে তাকালে বেশ ভালোই অনুধাবন করবেন। গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে ২৬ শতাংশ। নিত্যপণ্যের দাম তো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এর হিসাব দিয়ে হতাশা বাড়াতে উৎসাহিত না হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি। দেশের উন্নয়নের মাত্রা ‍নিরূপণে আরো কত ধরনের সূচক আছে সেগুলো না হয় বাদই দিলাম।

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে কেবল প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় হিসাব করলেই হবে না। তার সাথে যে জিনিসটা ভাবা আবশ্যক তা হলো পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি)। মানে ক্রয় ক্ষমতার সূচক। আপনার আয় বেড়েছে, বেশ ভালো কথা।কিন্তু আপনার বর্ধিত আয়ে ক্রয় ক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে সে বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বোধ করি। যদি আপনার ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে তাহলেই বলতে পারেন আপনার মাথাপিছু আয় বেড়েছে। 

মাথাপিছু হিসাবটা যদিও গড়ের তবে কার আয় কত, আয়ের মিন ডেভিয়েশন কত, কারা সাগরের তিমি আর কারা পুঁটি,  সেসব বিষয়গুলো না হয় ইগনোরই করলাম। 

গতকাল আরেকটা ছবি গণমাধ্যম বারবার আমার সামনে নিয়ে আসছিল। দেখা যায়,, আয় বাড়ার পরেও এক উন্নয়নশীল ব্যক্তি পলিথিনে ১০ টাকার তেল খরিদ করছেন।  ছবিটি আমাদের কি জানান দিচ্ছে তা হয়ত বুঝে গেলে অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার খবরটি ফলাও করে ছাপা যাবে না।

তবে আমরা চাই ফলাও করে অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার খবর ছাপা হোক।দেশ ভালো থাকুক। মানুষের মুখে অকৃত্রিম হাসি ফুটুক।    

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক

 কয়েকদিন আগে একটি সংবাদমাধ্যম নিউজ করেছে, দেশে পেট্রোল আছে ১১ দিনের আর অকটেন আছে ১৩ দিনের। পরে জানলাম, সাব-এডিটর ভুলবশত এই উপাত্ত দিয়েছে। তা...